ডাঃ নাজনীন সুলতানা/ প্রথম যেদিন মেয়েটিকে দেখলাম খুব ভালো লেগেছিল। বাবা মার সঙ্গে এসেছিল রেস্টুরেন্ট এ। আমার সাথে ছিল আমার মা আর বড় দুই বোন। আমরা মেয়েটিকে দেখতে গিয়েছিলাম। বাসায় ফিওে মাকে বললাম মেয়েটিকে আমার পছন্দ হয়েছে। কয়েক দিন মেয়েটির সাথে ফোনে কথাও হল। ভারী মিষ্টি গলা মেয়েটির। কিন্তু মেয়েটির বাবা আমার মা কে ফোন করে মানা করে দিল। আমরা ওদের মতো সম্পদশালী নই আর ওদের ডাক্তার মেয়ের জন্য ডাক্তার ছেলে দরকার। এরপর একবছর পার হয়ে গেল। এই এক বছর অনেক মেয়ে দেখছি। কিন্তু অনেক সুন্দর মেয়ের ভীড়ে শ্যামলা মেয়েটির নেই মিষ্টি হাসি আমার মন থেকে মুছতে পারিনি। একদিন বন্ধু মনির কে ফোন দিতে গিয়ে মনি নামের সেই মেয়েটিকে ফোন দিয়ে ফেললাম। সাথে সাথে ফোন কেটে দিলাম। মনের ভিতর পুষে রাখা এক বছর আগের কষ্টটা আর একবার নাড়া দিয়ে উঠল। কিন্তু সন্ধ্যে বেলা ফোনটা বেজে উঠতে দেখি সেই মেয়েটির ফোন। অনেক উত্তেজনা চেপে রেখে ফোন ধরলাম। ও জানতে চাইল আমার বিয়ে হয়েছে কিনা। মেয়েটি জানালো আমাকে ওর অনেক পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু ওর বাবা মা রাজী নয়। আমি ডাক্তার নই, এটাই ওদের আপত্তির কারন। সেদিন অনেকক্ষন কথা হল। ফোন রাখার পর মাকে বললাম আর একবার চেষ্টা করতে। মা মেয়েটির বাবাকে ফোন দিল। উনি বললেন ভেবে জানাবেন। দু-দিন পর মেয়েটি ফোন দিল বলল বাবা মা ভাববার জন্য একটু সময় চেয়েছে। আমার প্রতিদিনই কথা বলতাম। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম আমি এই মেয়ে টিকে ভালোবেসে ফেলেছি। মেয়েটি একদিন ফোন দিল, কাঁদতে কাঁদতে বলল ওর বাব মা রাজী হয়নি। বলল “আচ্ছা আমি যদি কখনো আমার বাবা মা কে রাজী করতে পারি আর আপনি যদি কাউকে বিয়ে না করেন তাহলে কি আপনি আমাকে জীবন সঙ্গী হিসাবে গ্রহন করবেন”। আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার মনে হচ্ছিল মনে হচ্ছিল বুকের ওপর কি যেন একটা পাথর চেপে বসে আছে। আমি কথা বলতে পারছিলাম না। কোন মতে বললাম তুমি যেখানেই থাক ভালো থেকো, হয়ত আমার ভাগ্যে তুমি নেই। সেদিন সারারাত ঘুমাতে পারলাম না খুব কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল মৃত্যুর কষ্ট ও কি এর চেয়ে তীব্র হয়। ভোর বেলায় একটা এস এম এস পাঠালাম “আমি বোধহয় তোমাকে ভালোবাসি”। তার দুই তিন ঘন্টা পর মেয়েটি ফোন করল। বলল আজ কি তোমার মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় বিয়ের কথা বলতে আসতে পারবে। মেয়েটি নাকি সারারাত কান্নাকাটি করে ওর বাবা মাকে রাজী করিয়েছে। আমার এক মুহুর্তের জন্য মনে হল আমি বোধ হয় স্বপ্ন দেখেছি। বিকালে আমি আর মা ওদের বাসায় গেলাম বিয়ের কথা পাকা করতে। আর তার একমাস পর সেই মিষ্টি মেয়েটি আমার ঘর আলো করে আমার বউ হয়ে এল। বিয়ের দিন যখন ্ওর হাত ধরলাম মনে হল এইহাত আর কখনো ছাড়বনা। আর এখন প্রতিরাতে ও আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে যায়, আর আমি দু হাতে জড়িয়ে রাখি নিবিড় ভালোবাসায়। আজ বিয়ের একবছর পর বলতে চাই “তোমাকে খুব ভালবাসি বউ” আর বিয়ের অনেক বছর পর যখন আমরা বুড়ো বুড়ি হয়ে যাব এমনি করেই ভালবাসবো।